মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৪

কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে এইচএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ


স্টাফ রিপোর্টার : কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে এইচএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। বোর্ড ফি’র বাইরে নানা খাতে পরিপত্রের বাইরে এসব টাকা আদায়ের সত্যতা মিলেছে। কলেজের অধ্যক্ষের নির্দেশে এসব টাকা আদায় করা হয়েছে বলে দাবী শিক্ষকদের। সুত্রমতে, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে এইচএসসির ফরম পূরণ শেষ হয় ২১ ডিসেম্বর। সরকারী কলেজে এইচএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ তোলে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবী, জেলার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এবার দ্বিগুন অর্থ আদায় করা হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কলেজের অর্থ বিভাগ, শিক্ষার্থী ও বোর্ড এর বিজ্ঞপ্তিতে অনুসারে জানা যায়, এইচএসসির ফরম পুরনে বিজ্ঞান বিভাগে নেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৯’শ ৫০টাকা। অথচ বোর্ড নির্ধারিত বিজ্ঞান বিভাগের ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফিস প্রতি পত্রে ৭৫ টাকা করে ৯’শ ৭৫ টাকা, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ফি ৫০ টাকা, সনদপত্র ফি ১’শ টাকা, ব্যবহারিক ফিস প্রতি পত্রে ৪০ টাকা করে ৩’শ ৬০ টাকা, রোভার স্কাউট ফিস ১৫ টাকা, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফিস ৫ টাকা, কেন্দ্র ফিস ৩’শ টাকা এবং কেন্দ্র ব্যবহারিক ফিস ২’শ ২৫টাকা। সবমিলিয়ে বোর্ড ফি ২ হাজার ৩০ টাকা।  এইচএসসির ফরম পুরনে বানিজ্য বিভাগে নেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৪’শ ৩০টাকা। বানিজ্য বিভাগের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফিস প্রতি পত্রে ৭৫ টাকা করে ৯’শ ৭৫ টাকা, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ফি ৫০ টাকা, সনদপত্র ফি ১’শ টাকা, ব্যবহারিক ফিস ৪০ টাকা, রোভার স্কাউট ফিস ১৫ টাকা, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফিস ৫ টাকা, কেন্দ্র ফিস ৩’শ টাকা। সবমিলিয়ে বোর্ড ফি ১ হাজার ৫’শ ৮৫ টাকা। এইচএসসির ফরম পুরনে মানবিক বিভাগে নেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৪’শ ৩০টাকা। মানবিক বিভাগের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফিস প্রতি পত্রে ৭৫ টাকা করে ৯’শ ৭৫ টাকা, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ফি ৫০ টাকা, সনদপত্র ফি ১’শ টাকা, ব্যবহারিক ফিস ৪০ টাকা, রোভার স্কাউট ফিস ১৫ টাকা, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফিস ৫ টাকা, কেন্দ্র ফিস ৩’শ টাকা। সবমিলিয়ে বোর্ড ফি ১ হাজার ৫’শ ৮৫ টাকা।  বোর্ড নির্ধারিত ফি এর বাইরে কলেজ কর্তৃপক্ষের সিধান্ত অনুসারে বিবিধ, চিকিৎসা, রেঞ্জার, রেডক্রিসেন্ট, পরিবহন, উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা, কম্পিটার ল্যাব ফিস এর নামে নানাভাবে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নানাভাবে তাদের নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হলেও তারা জানে না কোন খাতে কত টাকা নেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সিধান্ত উপেক্ষা করার বাস্তবতা ছিল না তাদের। চাপিয়ে দেয়া ফি দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা। কলেজে ফরম পুরন নিয়ে রাহাজানি করা হয়েছে। এদিকে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, সকল ফি পরিপত্র অনুযায়ী নেওয়া হয়েছে। তবে কলেজ কর্র্তপক্ষের এ দাবীর সত্যতা মেলেনি যশোর শিক্ষা বোর্ড এর বিজ্ঞপ্তি অনুসারে। খোঁজ নিয়ে বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল। প্রতি শিক্ষার্থীর নিকট থেকে কম্পিউটার ল্যাব এর নামে নেয়া হয়েছে ৩০ টাকা করে। অথচ এই খাতে টাকা নেয়ার কোন পরিপত্র নেই। সরকারী কলেজের অধ্যক্ষের একক নির্দেশনায় এ টাকা নেয়া হয়েছে বলে জানান শিক্ষকরা। যশোর শিক্ষা বোর্ডের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে একটি প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আইসিটি ফি মাত্র দেড় হাজার টাকা। অথচ কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে জনপ্রতি নেয়া হয়েছে ২০টাকা করে। বিবিধ খাতে নেয়া টাকার ব্যাপারেও রয়েছে ভিন্নমত। এব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, পরিপত্রের ধোঁয়া তুলে কয়েকজন শিক্ষক নানাভাবে শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়েছে। এটা অত্যন্ত অমানবিক। কম্পিউটার ল্যাব, আইসিটি ফি, বিবিধ সহ নানা খাতে টাকা আদায় করা হয়েছে যার কোন পরিপত্র নেই। শিক্ষকরা আরো জানান, গত ৫ ডিসেম্বর কলেজের অধ্যক্ষের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে জনপ্রতি নগদে ৪০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে কম্পিউটার বিভাগের ব্যবহারিক পরীক্ষার নামে। এই টাকা আদায় কমিটির আহবায়ক ছিলেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক লাল মোহাম্মদ। সেসসময় প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থীর নিকট থেকে আদায় করা হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। শিক্ষকরা বলেন, সরকারী কলেজে অধ্যক্ষের উপস্থিতিতে রশিদ ছাড়া এই প্রথম শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে, যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এব্যাপারে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের ফরম পুরন কমিটির আহবায়ক ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রফেসর মোহাম্মদ আলী ইছা জানান, সকল ফি পরিপত্র অনুযায়ী নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে যে ফিস নেয়া হয়েছে তা অধ্যক্ষের নির্দেশক্রমেই নেয়া হয়। কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বদরুদ্দোজা বলেন, কোন শিক্ষার্থীর নিকট থেকে নগদ টাকা আদায় করা হয়নি। যে সকল বিষয়ে টাকা আদায় করা হয়েছে তার পরিপত্র আছে। যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মুহম্মদ আবু দাউদ বলেন, অতিরিক্ত টাকা নেয়ার ব্যাপারে অনেকেই আমাকে মোবাইলে জানিয়েছে। আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে সহজ হবে।

( আগামীকাল পড়ন কলেজের উন্নয়নের নামে বিভিন্ন খাতে অর্থ লোপাটের ফিরিস্তি )

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন