মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৪

কুষ্টিয়ার খাজানগরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা রাইচ মিলের তুষ ছাই ধোঁয়াতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ



আব্দুম মুনিব : কুষ্টিয়ার খাজানগরে পরিবেশ অধিদফতরের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠেছে মিল-কলকারখানা। বাংলাদেশে চালের প্রসিদ্ধ খাজানগর, আইলচারা, কবুরহাট। চালের চাহিদার কারণেই এখানে গড়ে উঠেছে অনেক অটো রাইস মিল ও ধান চাতাল। কিন্তু এসব অপরিকল্পিত রাইস মিল ও চাতালের ধোয়া, বর্জ্য, ধুলো ময়লা, তুষ ছাই উড়ে আবাসিক বসতবাড়িতে পড়ে একদিকে যেমন এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে মিল গড়ে তোলায় দুর্ঘটনায় মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটছে। সুত্রমতে, চাল উৎপাদনের বৃহৎ শিল্পনগরী কুষ্টিয়ার খাজানগর, কবুরহাট, আইলচারা, বল্লভপুরে প্রায় ৫০টি বড় অটোরাইস মিলসহ ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৮শ টি রাইস মিল গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি ধান সিদ্ধ-শুকানোসহ নানা প্রক্রিয়ার জন্য চাতালও রয়েছে দুই সহ্রাধিক। সেখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় আট হাজার টন চাল উৎপাদিত হয়। এখানকার উৎপাদিত চাউলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে রফতানি করা হয়। চালের চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় মিলাররা ও ব্যবসায়ীরা চাল উৎপাদনে যেমন আগ্রহী হয়ে উঠেছে তেমনি দিন দিন বেড়েই চলেছে অটোরাইস মিলের সংখ্যা। কিন্তু অটোরাইস মিল বাড়লেও তা নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে না। অটোরাইস মিলগুলোতে নির্দিষ্ট পরিমাণ উঁচু চিমনী থাকার কথা থাকলেও বেশিরভাগ মিলেই চিমনী নেই। চিমনী না থাকায় মিলের ছাই ময়লা উড়ে আশপাশের বাড়িঘর যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি পথচারীদের চোখে-মুখে পড়ে চোখ নষ্ট হচ্ছে। সেই সাথে ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা। সব মিলিেেয় চরম ভোগান্তিতে রয়েছে এখানকার মানুষ। খাজানগরের মিল সংলগ্ন ছোট ছোট ব্যাবসয়ী ও কয়েকটি পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেন মিলের ধোঁয়া, ছাই ও তুষ উড়ে তাদের বসবাসের অবস্থা নেই। আবাসিক এলাকার মধ্যে এসব মিল গড়ে উঠায় সব সময় ছাই উড়ে তাদের ঘরবাড়ি অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে টিনের ঘর বসতবাড়িসহ গাছ-পালা। এতে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এসব ধোঁয়া ও ছাইয়ের কারণে এসব এলাকার পরিবারগুলোতে চোখের রোগ, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ সম্মুক্ষিন হতে হচ্ছে। জানা গেছে, মিলের ধোঁয়া ও ছাই উড়া বন্ধে নির্দিষ্ট পরিমান উঁচু চিমনী ব্যবহার। এবং মিলের নিচের দিকে হাওয়ার সাহায্যে ছাই এবং তুষ একস্থানে স্তুপ করা যায়। কিন্তু এটি তৈরি করতে বাড়তি ব্যয় হওয়ায় মিল মালিকরা এটি স্থাপন না করায় মিলে ছাই তুষ উড়ে পরিবেশ দূষিত হয়। চাতালগুলোতেও জ্বালানি তুষ ব্যবহারের জন্য চিমনী তৈরি করলে এসব ছাই বাইরে উড়ে পড়ে না বলে অনেক মিলাররাও জানায়। কিন্তু নিয়মতান্ত্রিকভাবে মিল গড়ে না উঠায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকাবাসী। এছাড়াও অপরিকল্পিতভাবে ছাইয়ের গাদার ওপর বিল্ডিং স্থাপন করায় দেয়াল ধসে মানুষের জানমালের চরম ক্ষতি হচ্ছে। কয়েক বছরে মারা গেছে বেশ কয়েকজন। গত ১৬ মে বল্লভপুর সুবর্ণা রাইস মিলের দেয়াল ধসে মারা গেছে একজন শ্রমিক আহত হয়েছে তিনজন। মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের নির্দিষ্ট পোশাক ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও খাজানগর আইলচারার কোনো মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের পোশাক ব্যবহার করানো হয় না। ফলে মিলে ধূলা-ময়লা, ধোয়া সহজেই শ্রমিক-কর্মচারীদের দেহে প্রবেশ করে এ্যাজমা রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রন্ত হচ্ছে।
অন্যদিকে পুরুষের তুলনায় নারীদের মজুরিতে বৈষম্য থাকলেও চাতালগুলোতে নারীরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে রাতযাপনের জন্য আবাসন না থাকায় মিলের ধুলো ময়লার মধ্যে রাত কাটানোর কারণে তারাও বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।  এদিকে পরিকল্পিতভাবে মিল গড়ে তোলার দাবিতে বেশ কয়েকবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে এলাকার লোকজন। তাদের দাবি মিলগুলোতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে চিমনী ব্যবহারসহ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে ছাই উড়া বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট শ্রম বিভাগ ও পরিবেশ বিভাগ থাকলেও তাদের কোনো তদারকি নেই এখানে। ফলে কুষ্টিয়ার খাজানগর আইলচারার মিল মালিকরা তাদের ইচ্ছেমতো মিলগুলো স্থাপন ও পরিচালনা করছেন। এতে জনসাধারণ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এদিকে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করা হলে কর্মকর্তারা জানান, বিষয়গুলি চিহিৃত করে দ্রুত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। কুষ্টিয়ায় পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বিবর্তনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, চাতালগুলির যত্রতত্র অবস্থান কালো ধোয়ায় চরম ভাবে পরিবেশ ও মানবাধীকার লংঘন হচ্ছে। তিনি বলেন, নির্গত কালো ধোঁয়ার প্রভাবে ক্ষেতের ফসল উৎপাদন কমে গেছে। পশু-পাখির আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। জনবসতি এলাকা হওয়ায় নির্গত ধোঁয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে দেহে প্রবেশ করে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, মিলের ধোঁয়া ও ছাই উড়া বন্ধে নির্দিষ্ট পরিমান উঁচু চিমনী ব্যবহারের কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। তিনি অবিলম্বে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এ পরিবেশ দুষন কঠোর ভাবে হস্তক্ষেপের দাবী জানান। অন্যদিকে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা মিল-কলকারখানায় কারণে জনদুর্ভোগ ও শ্রমিক-কর্মচারীদের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এলাকাবাসী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন