সোমবার, জানুয়ারী ২১, ২০১৩

ইবির নতুন প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা নিয়োগ

দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষকদের আন্দোলনের বিজয় : আজ থেকে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু

ইমামুল হাছান আদনান, ইবি : অনিয়ম-দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছে। গতকাল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বিতর্কীত প্রক্টর ও ছাত্রউপদেষ্টাকে সরিয়ে নতুন প্রক্টর ও ছাত্রউপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন শিক্ষকরা। ফলে র্দীঘ পাঁচ মাস আচল থাকার পর আজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। ক্যাম্পাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে ক্যাম্পাসে। প্রশাসন ও শিক্ষকদের সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। সূত্র মতে, গত ৭ সেপ্টেম্বর হতে নিয়োগ বণিজ্যকে কেন্দ্র করে অচল হয়ে পড়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। স্থগিত হয়ে যায় ২২টি বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা। অচলাবস্থায় ২২টি বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের অন্তত: ৯ শতাধিক চুড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি ও বাণিজ্যের অভিযোগকে কেন্দ্র করে শিক্ষকরা ভিসি, প্রো-ভিসি পতনের আন্দোলনে নামে। শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী দুর্নীতির অভিযোগে ভিসি ও প্রো-ভিসিকে অব্যাহতি দেয়া হয়। নতুন ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. আব্দুল হাকিম সরকারকে। শিক্ষকদের উপর সন্ত্রাসী হামলার মদদ দেয়ার অভিযোগে শিক্ষকরা প্রক্টর ড. আক্তারুল ইসলাম জিল্লু ও ছাত্র-উপদেষ্টা ড. লোকমান হাকিমের পদত্যাগ দাবিতেও আন্দোলনে নামে। তাদের দাবি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি গতকাল অভিযুক্ত প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টাকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন প্রক্টর নিয়োগ দেন। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত প্রক্টর হলেন- ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন এবং ছাত্র উপদেষ্টা ফলিত পদার্থ, ইলিক্ট্রেনিক্স এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান। ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুল হাকিম গতকাল শিক্ষক সমিতিসহ আন্দোলনরত সকল শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। দীর্ঘ তিন ঘন্টা আন্দোলনরত বিভিন্ন শিক্ষককদের সাথে বৈঠক শেষে বিকেল চারটার সময় নতুন প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মসলেম উদ্দিন বলেন- রোববার বিকেলেই সদ্য নিয়োগপ্রাপ্তদের চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।
ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টরকে অব্যাহতি ও ওই দুই পদে নতুন শিক্ষক নিয়োগের পরপরই শিক্ষক সমিতি ও শিরক ফোরামগুলো তাদের আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেছেন। সেই সাথে আজ থেকে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের একাডেমিক কর্মকান্ডে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন তারা। ক্যাম্পাসের অস্থিতিশীলতার ফলে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করার সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টা চালাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। এমনকি অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
প্রশাসনের সিদ্ধান্ত, শিক্ষক সমিতি ও শিক্ষক ফোরামগুলোর ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে যাওয়ার ঘোষণায় প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দ ও উচ্ছাস করতে দেখা গেছে। যেনো তারা নতুন জীবন ফিরে পেলো।
ইবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের মৌলিক দাবিগুলো মেনে নিয়েছে। তাই আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছি। আগামীকাল (আজ) থেকে আমরা ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে যাবো। তবে বিষয়টি কার্যনিবাহী পরিষদের বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। দুর্নীতি ও অনিয়ামের বিরুদ্ধে শিক্ষক সমিতির আন্দোলন পুরোপুরি সফল হলো। শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে যে পাঁচমাস সময় হারিয়ে গেলো সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার জন্য শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির এ নেতা।
ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুল হাকিম সরকার বলেন, অনেকদিন ধরে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছিলো। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ক্যাম্পাস সচল করার চেষ্টা করেছি। সবার সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কথা ভেবে আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার সিদ্ধান্ত শিক্ষকরা মেনে নিয়েছেন। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে অভিনন্দান জানাই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন