ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অচলাবস্থা এবং ক্যাম্পাস সচলে ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকারের নিস্ক্রিয়তায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যেবোধে বিশ্বাসী শিক্ষকবৃন্দ। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জিয়া পরিষদ ও গ্রীন ফোরমের নেতৃবৃন্দ এক যৌথ বিবৃতিতে নবনিযুক্ত ভিসি ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে কোন প্রদক্ষেপ গ্রহন করেনি বলে অভিযোগ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার জিয়া পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. আলিনুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. রুহুল আমীন ভুইয়া এবং গ্রীন ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রফেসর ড. আহসান উল্লাহ ফয়সাল ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. আ ছ ম তরিকুল ইসলাম এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, গত ১২ জানুয়ারী কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা চালুর ব্যাপারে যখন আলোচনারত সেই সময় ছাত্রলীগ বহিরাগত সন্ত্রাসীসহ কিছু দু®কৃতকারী শিক্ষকদের ওপর নারকীয় হামলা চালায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে জঘন্যতম ও ভয়াবহ হামলায় উপস্থিত সকল শিক্ষক যখন প্রাণে বাঁচার জন্য ভিসির কাছে বারবার সকাতর আবেদন জানায়। তখন তিনি শিক্ষকদের আবেদনে কর্ণপাত করেননি। ঘটনার পরেও সমবেদনা জানানোর জন্য শিক্ষকদের দেখতে আসেন নি। এই নিন্দনীয় ঘটনার পর প্রাণনাশের হুমকি ও নির্মম প্রহারের মাধ্যমে অবর্ণনীয় মানসিক চাপ সৃষ্টি করে
শিক্ষক সমিতির সভাপতিকে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা প্রদানে বাধ্য করা হয়। এ ধরনের অনাকাক্ষিত ঘটনার পরে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার স্বার্থে উপাচার্য মহোদয়ের উচিত ছিল সকল শিক্ষক-সংগঠনকে নিয়ে আলোচনায় বসা। অতীতেও উপাচার্যগণ উদ্ভূত পরিস্থিতি এড়াতে ও সংকট উত্তরণে সকল শিক্ষক-সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সিনিয়র শিক্ষকদের বৈঠক ডেকে পরামর্শ চাইতেন। কিন্তু ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয় লাঞ্ছিত-প্রহৃত ও প্রাণনাশের হুমকিপ্রাপ্ত শিক্ষকগণের নিরাপত্তাবিধানের কোনো ব্যবস্থা তো করেননি। বরং পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রেখে তিনি ঢাকা চলে গেছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতি ও পরিস্থিতি-পরবর্তী ঘটনাবলি প্রমাণ করে যে, উপাচার্য বিগত আমলের আত্মস্বার্থকামী-ক্ষমতালোভী স্বল্প কিছু শিক্ষক দ্বারাই বন্দি হয়ে আছেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হামলায় অংশগ্রহণকারীদের চেহারা দেখে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়েছে যে, ঘটনার দিন ক্লাস-পরীক্ষা চালুর দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কখনই শিক্ষক-নির্যাতনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। বরং সাধারণ শিক্ষার্থীর নামে কতিপয় ছাত্রলীগ নেতা বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায়। যা ছিল সম্পূর্ণরূপে পূর্ব পরিকল্পিত। এই হামলার ব্যাপারে ঝিনাইদহে গোপন বৈঠক হয়েছে বলেও পত্রিকান্তরে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এই চিত্র সত্যিই ভয়াবহ অশনি-সংকেত মাত্র। ছাত্র-শিক্ষকের পবিত্র সম্পর্কের ওপর কালিমালেপনের দায় সম্পূর্ণরূপে কিছু ষড়যন্ত্রকারী শিক্ষক ও বিভ্রান্ত ছাত্রনেতৃত্বের, কখনোই সাধারণ শিক্ষার্থীর নয়। ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষক-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন এই সত্যকেই তুলে ধরে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যেবোধে বিশ্বসী গভীরভাবে বিশ্বাস করে, রাস্তা বা আন্দোলন নয়, ক্লাসই ছাত্র-শিক্ষকের মূল গন্তব্য। কিন্তু সেই ক্লাসের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে বারবার দুর্নীতিবাজ ও দুর্নীতিবাজ-সহযোগী একটি ক্ষুদ্র শিক্ষকগোষ্ঠী এবং নিয়োগবাণিজ্য প্রত্যাশী গুটি কয়েক ছাত্রনেতা অশুভ আঁতাতের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল, অনিরাপদ ও সন্ত্রাসীর অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলার চক্রান্ত করছে। এমতাবস্থায় আমাদের প্রশ্ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষক শিক্ষাবৈরী এই অনিরাপদ পরিবেশে নিজেদের প্রাণ বিপন্ন করে কার আশ্বাসে, কার ভরসায় ক্লাসে ফিরবে? ইতোমধ্যে স্বল্পদিনের ব্যবধানে গত ১৯ নভেম্বর ও ১২ জানুয়ারী তারিখে দুই-দুইবার শিক্ষকদের ওপর হামলার মতো বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই বিপন্ন শিক্ষকদের রক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ ছিল নির্বিকার। বরং প্রশাসনেরই কিছু ব্যক্তির ছত্রছায়ায়ই এই ঘটনা ঘটেছে বলে পত্রিকাসহ নানাসূত্র তা উন্মোচিত করেছে। এমতবস্থায় ক্যাম্পাসে বার বার শিক্ষকদের উপর হামলার ইন্দনদাতা প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার অপসারণ এ্ং ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলেই শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে ফিরে আসবে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন