শুক্রবার, নভেম্বর ২৮, ২০১৪

আলোচিত লিপু হত্যাকান্ড

খোঁজ না মেলা ছেলের অপেক্ষায় মা

আব্দুম মুনিব : শ্বাসরোধে যখন খুন করা সম্ভব হয়নি তখন পেটে চাকু মেরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে খুনিরা। শুধু তাই নয় খুন করার পরেও বুকের সাথে ইট পেঁচিয়ে দিয়ে পদ্মা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে র‌্যাবের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে খুনিরা। বছরের আলোচিত সেই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবী ছাত্র লিপুর আজ ২১তম জন্মদিন। খুনিরা দোষ স্বিকার করলেও এখন পর্যন্ত খোজ মেলেনি লিপুর লাশ কিংবা জীবন্ত লিপুর। তাইতো অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে শোকে পাথর হয়ে গেছে লিপুর মা কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের শিক্ষিকা সামসুন্নাহার লিলি। অজনা কারণে ডুকরে কেঁদে উঠে একমাত্র বোন ফারজানা মীম। আর একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে স্বপ্ন ভেংগে গেছে অগ্রণী ব্যাংক কুষ্টিয়া প্রধান কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) ওয়াহিদুল ইসলামের।  র‌্যাব কর্মকর্তা জানিয়েছিলো, খুনিদের উদ্দেশ্য ছিলো ভিন্ন। বড়লোকের একমাত্র ছেলে তৌহিদুল ইসলাম লিপুর ব্যবহৃত দামী মোটরসাইকেল এবং তাকে অপহরণ করে তার বাবার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় ছিলো মূল কারণ। এজন্য কয়েক দফায় লিপুর বাবার নিকট মোবাইলফোনে ৩ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে অপহরণকারীরা। কিন্তু অপহরনকারীকে চিনে ফেলায় কাল হয় লিপুর। সব ফাঁস হয়ে যেতে পারে বলে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে অপহরনকারীরা। শুধু হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, তার লাশের চিহ্ন যেন না পাওয়া যায় সেজন্য তার লাশ পদ্মায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়া।  লিপুর খুনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে র‌্যাব-১২
কুষ্টিয়ার একটি দল মূল হত্যা পরিকল্পনাকারী কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উদিবাড়ী এলাকার জহুরুল হকের ছেলে রাকিবুল ইসলাম বাপ্পী ও তার সৎ মা আনোয়ারা এবং লিপুর বাবার মামাতো ভাই শুভকে আটক করে। তারা সবাই বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। সেই সাথে লিপুর মোটরসাইকেলসহ আটককৃত আরো ৩জনসহ মোট ৯ জন আসামী বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে বলে জানায় লিপুর চাচা ওবাইদুল ইসলাম রিপন। এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুষ্টিয়া ডিবি পুলিশের ওসি পারভেজ ইসলাম পিপিএম জানান, লিপু হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে ৯ জন আসামী আটক রয়েছে এর মধ্যে ৪ জনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। বর্তমানে মামলার তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি। চলতি বছরের ৩১শে আগষ্ট বাড়ী থেকে বের হওয়ার পর আর খোঁজ মেলেনি লিপুর। এরপর লিপুর বাবা অপহরণের অভিযোগে ৪ সেপ্টম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে রাকিবুল ইসলাম বাপ্পী ও তার সৎ মা আনোয়ারা কে আটক করে পরে বাপ্পীর স্বীকারোক্তি মোতাবেক এই হত্যাকান্ডের মুল পরিকল্পনাকারী শুভ কে আটক করা হয়। আসামীদের আটক করে প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব জানিয়েছিলো পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মাজদিয়া গ্রামে ১ সেপ্টেম্বর রাতে হত্যার পর লিপুর লাশ পদ্মা নদীতে ফেলে দেওয়া হয় জিজ্ঞাসাবাদে বাপ্পী এমনই তথ্য দিয়েছিল। র‌্যাব সাংবাদিকদের আরো জানিয়েছিলো, সরাসরি হত্যাকান্ডে অংশ নেয় বাপ্পী। তার ভাষ্যমতে, গত ৩১ আগস্ট সন্ধ্যায় তারা ছয়জন মিলে লিপুকে পাবনার ঈশ্বরদীতে নিয়ে যায়। সেখানে মাজদিয়া গ্রামের সুমন নামে এক যুবকের পরিকল্পনায় লিপুকে সেখানে নিয়ে মাদকসেবন করানো হয়। পরে রাত ১০টার দিকে তাকে সুমনের বাড়িতে রাখে। ১ সেপ্টেম্বর সারা দিন সুমনের বাড়িতে রাখার পর সন্ধ্যার দিকে মাজদিয়া গ্রামের মাঠে আখ ক্ষেতে লিপুকে শ্বাসরোধে হত্যার পর বুকে ছুরি দিয়ে কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। রাত সাড়ে আটটার দিকে ১০টি ইট বেঁধে লাশ পদ্মায় ফেলে দেওয়া হয়। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন