শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৩

ইবিতে শিক্ষকদের উপর হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে মৌন মিছিল

রাশেদুন নবী রাশেদ, ইবি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপর ছাত্রলীগ নামধারী ক্যাডারদের বর্বরচিত হামলার ১০মাস পেরিয়ে গেলেও হামলাকারীদের বিচার না হওয়ায় এবার কঠোর আন্দোলনে নামছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। হামলার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দ্রুত প্রকাশ ও হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার মৌন মিছিল করেছে শিক্ষক সমিতি। কঠোর কর্মসূচী ঘোষনা। ক্যাম্পাস অচল হওয়ার আশংকা। জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষক লাঞ্ছনাকারী ও নিযার্তনকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি’ ব্যানারে মৌন মিছিল বের করে শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. নজিবুল হক ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. ইকবাল হোছাইনের নের্তৃত্বে মৌন মিছিলটি মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
এসময় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. ইকবাল হোছাইনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. নজিবুল হক, দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. আবুল কালাম পাটোয়ারী, জিয়া পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. শহিদুল ইসলাম নূরী, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও আল কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. এয়াকুব আলী, আল হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. শফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস শাহিদ মিয়া, প্রফেসর ড. শহীদ মোহাম্মদ রেজওয়ান, প্রফেসর ড. আ ছ ম তরিকুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মোহা:তোজাম্মেল হোসেন, সহযোগী প্রফেসর ড. কামরুল ইসলাম প্রমূখ।
বক্তারা বলেন,‘ গত বছরের ১৯ নভেম্বর ও চলতি বছরের ১২ জানুয়ারী ছাত্রলীগ নামধারী ক্যাডাররা শিক্ষকদের উপর যে বর্বোরচিত হামলা চালিয়েছে তা শুধু ইসলামী বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষকদেরই না পুরো শিক্ষক সমাজকে অপমানিত করেছে। এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও তার প্রতিবেদন এখনও আলোর মুখ দেখেনি। এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতা ও হামলাকারীদের বাঁচানোর একটি প্রয়াস। তারা বলেন, অতিদ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে হামলাকারীদের শাস্তির আওতায় না আনা হলে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. এম এয়াকুব আলী বলেন- যেসকল ছাত্রনামধারী সন্ত্রাসী শিক্ষকদের উপর হামলা করেছে তাদেরকে শাস্তি না দিয়ে বর্তমান প্রশাসন চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করতে চাচ্ছে। শিক্ষকদের উপর হামলাকরীরাই আজ আবারো চাকরির দাবিতে ক্যাম্পাস অচল অচল করে দিয়েছে। এখনই এদের লাগাম টেনে না ধরলে ভবিষ্যতে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
প্রফেসর ড. আবুল কালাম পাটোয়ারী তার বক্তব্যে বলেন‘ বর্তমান প্রশাসন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যর্থ প্রশাসন। দীর্ঘদিনেও হামলাকারীদের বিচার না হওয়া এই ব্যর্থতারই একটি নমুনা।’ মৌন মিছিল শেষে শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. নজিবুল হক পরবর্তি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর কালো ব্যাজ ধারণ, ২৯ সেপ্টেম্বর উপাচার্য অফিসের সামনে অবস্থান ও স্মারকলিপি প্রদান।
জানা গেছে, গত বছরের ১৯ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১৭তম সিন্ডিকেটে ১২৬ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দলীয়করন, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগ-বাণিজ্যের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক তিন কর্তাব্যক্তি ভিসি প্রফেসর ড. আলাউদ্দীন, প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. কামাল উদ্দীন ও ট্রেজারার প্রফেসর ড.মো: শাহজাহান আলীর পদত্যাগের দাবিতে প্রশাসন ভবনে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন শিক্ষকরা। অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে অতর্কিত হামলা চালায় অস্ত্রধারী ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। এতে ৩ জন সাংবাদিকসহ ৩০ জন শিক্ষক আহত হন। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন আরও ২০ জন শিক্ষক। এ ঘটনার দুই মাস হতে না হতেই আবার হামলার শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে বিপুল সংখ্যক বহিরাগতদের নিয়ে ফের আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এসময়ও প্রায় ২৫/৩০ জন শিক্ষক আহত হন। ১৯ নভেম্বর হামলার ঘটনায় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মামুনুর রহমানকে আহক্ষায়ক করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে এ তদন্ত কমিটিকে শিক্ষক সমিতি আপত্তি জানালে প্রফেসর ড. মামুনুর রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমানকে আহক্ষায়ক করা হয়। ১২ জানুয়ারীর ঘটনায় ওই দিনই ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. রুহুল কেএম সালেহকে আহক্ষায়ক করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উভয় কমিটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও ১০ মাসেও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি তদন্ত কমিটি।
এ সম্পর্কে ১৯ নভেম্বরের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির আহক্ষায়ক প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান বলেন,‘ তদন্ত কমিটির কাজ চলছে। আগামী ২ অক্টোবর বৈঠক ডাকা হয়েছে। এই বৈঠকেই পরবর্তি করনীয় বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে কবে নাগাদ রিপোর্ট দিতে পারব এ মুহুর্তে তা বলা যাচ্ছে না।’
বিশ্ববিদ্যালযের উপাচার্য প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন,‘ এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির কাজ চলছে। প্রতিবেদন পাওয়া মাত্রই দোষীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
’ উল্লেখ্য, বর্তমানে ইবির প্রায় ৪৫ কোটি টাকা বাজেট ঘাটতি রয়েছে। এর পরও গত চার বছরে একাধিক গণ নিয়োগের কারনে অতিরিক্ত জনবলের ভারে অর্থনৈতিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। গত বছর নিয়োগ প্রাপ্ত ১১৬ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী কে সরকারের পক্ষ থেকে বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে না। ফলে এই ১১৬ জনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদ্রাসা ফান্ড থেকে বেতন দিতে হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন