মঙ্গলবার, মার্চ ২৫, ২০১৪

প্রশাসনের উদাসীনতায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রায় ২ কোটি টাকার গাড়ী

রাশেদুন নবী রাশেদ, ইবি ॥ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের অবহেলায় ও উদাসীনতায় প্রায় ২বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি সরকারী বাস আগুনে পুরে অচল হয়ে পড়ে আছে। বর্তমান বাজারে গাড়ী দুটির মূল্য প্রায় ২কোটি টাকা। প্রসাশনের অবহেলায় অযতেœ পড়ে আছে এ মূল্যবান দুটি গাড়ী। আর কিছুদিন এভাবে থাকলে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে বলে ধারনা করেছেন অনেকে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সংকটে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিস সুত্রে জানা গেছে, পৃথক দুটি ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অদক্ষতা ও অযোগ্যতার কারনেই গত বছর ছাত্রলীগের বহিরাগত চাকরী প্রত্যাশীরা চাকরীর দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মমতাজ ভবনের সামনে পার্কিং করে রাখা জাপানি হিনো ইঞ্জিনের গাড়িটি আগুনে পুরে দেয়। এছাড়া গত ৮ জানুয়ারী দেশে নির্বাচন কেন্দ্রীক ১৮ দলের ডাকা অবরোধ চলাকালে ছাত্রদলের কর্মীরা একই জায়াগায় পার্কিং করে রাখা ভারতীয় টাটা কোম্পানীর আরো একটি সরকারী বাস আগুনে পুরে দেয়। পুড়ে যাওয়া এ মূল্যবান গাড়ী দুটি প্রশাসনের চরম অবহেলা ও উদাসীনতায় প্রায় দু’বছর ধরে মমতাজ ভবনের সামনে অযতেœ, খোলা আকাশের নিচে ঝড়-বৃষ্টিতে পড়ে আছে। আজ পর্যন্ত গাড়ী দুটির কোন মেরামত করতে পারেনি প্রশাসন। এভাবে ঝড়-বৃষ্টিতে পড়ে থাকলে আর অল্পদিনের মধ্যে গাড়ী দুটির মুল ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাবে বলে ধারনা করছেন অনেকে। বর্তমান বাজারে এ গাড়ী দুটির দাম প্রায় ২ কোটি টাকা। ধারনা করা হচ্ছে গাড়ী দুটি মেরামত করতে প্রায় ৭/৮ লক্ষ টাকা লাগতে পারে। কিন্তু প্রশাসন ৭/৮ লক্ষ টাকা খরচের অভাবে প্রায় ২কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। এমনিতেই এ বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি পরিবহন নির্ভর ক্যাম্পাস। যার অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে ২২ ও ২৪ কিলোমিটার দুরে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা গাড়ীতে করে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। ফলে অনেক সময় গাড়ী সংকটের কারনে শিক্ষার্থীরা বাসের ভিতরে জায়গা না পেয়ে বাদুর ঝোলা করে ও গাড়ীর ছাদে করে যাতায়াত করতে দেখা যায়। কিèতু প্রশাসনের ব্যর্থতার কারনে ক্যাম্পাসের সরকারী এ দুটি গাড়ী পোড়ানো হলেও আজ পর্যন্ত তার কোন মেরামত করতে না দেখায় শিক্ষক শিক্ষার্থীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।


বিশ্ববিদ্যালয় সুত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে এ গাড়ী মেরামতের জন্য একটি টেন্ডার আহক্ষান করা হয়। পরে সেটি সরকারী বিধি মোতাবেক না হওয়ায় বাতিল হয়ে যায়। বর্তমানে গাড়ি দুটি মেরামতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিনকে আহক্ষায়ক করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আইনি জটিলতার অজুহাত দেখিয়ে দিনকে দিন অতিবাহিত হলেও গাড়ি এখনোও ঠিক হয়নি।  বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসে কথা বলে জানা গেছে, গাড়ী দুটি মেরামতের জন্য আবার নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিনকে আহবায়ক করে নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির সদস্য সচিব বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক প্রফেসর ড.মামুনুর রহমান, উপ-প্রকৌশলী কে.এম আব্দুস সলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মালেক, অর্থ ও হিসাব শাখার শেখ জাকির হোসেন প্রমুখ। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গাড়ী দুটি মেরামতের জন্য অল্প কিছুদিনের মধ্যে একটি টেন্ডার আহক্ষান করা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এব্যাপারে কমিটির আহক্ষায়ক প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন বলেন, “কমিটির কাজ যথাযথ ভাবেই এগিয়ে চলছে। এব্যাপারে আর কিছু বলার নেই”। এ বিষয়ে কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক প্রফেসর ড. মামুনুর রহমান বলেন,‘ আমি প্রসাশনকে গাড়ী দুটি মেরামতের জন্য বার বার নোট দিয়ে আসছি। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতার কারনে তা পিছিয়ে গেছে। তবে বর্তমানে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খুব শীঘ্রই টেন্ডার ছাড়া ছাড়া হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে আশা করি গাড়ী দুটি মেরামত সম্পন্ন হবে।’
প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শাহীনুর রহমান বলেন, “বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার পরও নানান জটিলতায় দীর্ঘ দিন গাড়ি দুটি মেরামত করা সম্ভব হয়নি। তাবে এবার উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করি অতি শীঘ্রই গাড়ি দুটির মেরামতের কাজ সম্পন্ন হবে”।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন