বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ০৭, ২০১৩

দৌলতপুরের ২৭ টি ইটভাটায় অবাধে কাঠ পুড়ছে

দৌলতপুর প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুের বৈধ অবৈধ সকল ইটভাটা মালিকরা একাট্টা হয়ে তাদের ইটভাটায় কাঠ পুড়াচ্ছে। উপজেলার ইটভাটা মালিকদের ২৭ টি ইটভাটায় অবৈধভাবে প্রতিদিন বিপুল পরিমান কাঠের খড়ি পুড়ছে। দেশের বনজ সম্পদ উজাড় করে প্রতিদিন ট্রাক ট্রাক খড়ি দৌলতপুরের ইটভাটাগুলোয় নিয়ে আসা হচ্ছে। সরকারি নিয়মনীতির কোন রকম তোয়াক্কা না করে এখানকার ইটভাটা মালিকরা তাদের ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানোর প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। এসকল ইটভাটাগুলো কৃষি জমিতে স্থাপন করায় ব্যাপকহারে কমে গেছে ফসলের উৎপাদন। তাছাড়া ইটভাটা সংলগ্ন অন্যান্য জমির ফসল পুড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ কৃষক। সরকারি হিসেব অনুযায়ি বর্তমানে দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৭ টি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। পরিবেশ আইন অনুসারে দৌলতপুর উপজেলায় ইটভাটা স্থাপনের জন্য কোন জায়গা না থাকলেও ইটভাটা মালিকদের সাথে পরিবেশ কর্মকর্তাদের আপস অথবা অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে তারা ১৭টি ইটভাটা মালিককে অনুমোদন দিয়েছে। এবং এর জ্বালানি হিসেবে কয়লা পোড়ানোর নিয়ম থাকলেও দৌলতপুর উপজেলায় তা কোন ভাবেই মানা হচ্ছেনা। অন্যদিকে সরকারি নির্দেশ মতে ড্রাম চিমনির ব্যবহার অবৈধ ঘোষণা করা হলেও বেশির ভাগ ইটভাটা মালিক সরকারের এই নির্দেশ অমান্য করে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ড্রাম চিমনি ব্যবহার করছে। ড্রাম চিমনির ব্যবহার নিষিদ্ধ হবার পরও তারা সরকারকে রীতিমত বৃদ্ধাঙ্গুৃলি দেখিয়ে ড্রাম চিমনি দিয়ে ইট পোড়াচ্ছে। খোদ দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের এক কিলোমিটারের মধ্যে ৩ টি ইটভাটায় ড্রাম চিমনির ব্যবহার করা হচ্ছে। দৌলতপুর উপজেলার ২৭ টি ইটভাটার মধ্যে ফিক্সড চিমনি রয়েছে ১৭টি এবং ড্রাম চিমনি রয়েছে ১০ টি। ফিক্সড চিমনি গুলো উপজেলার স্বরূপপুরে আব্দুস সাত্তার, বজলুর রহমান ও নুরুল ইসলাম। ডাংমড়কায় খন্দকার আবুল কালাম আজাদ, ফজলুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলম। কায়ামারিতে আ’লীগ নেতা আবুল কালাম, চক দৌলতপুরে আব্দুল হান্নান ও রমজান আলী, মানিক দিয়াড়ে মামুন বিশ্বাস, রিফায়েতপুর জোয়ার্দারপাড়ায় শহিদুল ইসলাম ওলি, দৌলতপুর হাসপাতালাতের পার্শ্ববর্তি এলাকায় মনিরুল ইসলাম, আব্দুস সালাম, আড়িয়ায় জিয়ারত আলী, ও হাবলু মোল¬া। অবৈধ ড্রাম চিমনির মধ্যে গলাকাটি মোড়ের ঝুমুর আলী ও আমিরুল ইসলাম, দৌলতপুর হাসপাতাল এলাকার ইয়াছিন আলী, দৌলতখালির সুজন আলী, জয়রামপুরের রেন্টুু বিশ্বাস কল্যাণপুরে আলাউদ্দিন, মসলেমপুরে স্বপন আলী, বাজুডাঙ্গায় আবু বক্কর, সাদিপুরে ইদবার আলী বেজপুরে কবির হোসেন ও ডাংমড়কায় সাজাহান সিরাজ। সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পমন্ত্রণালয় থেকে ইটভাটা গুলোয় জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহারের জন্য নির্দেশ দেয়া হলেও দৌলতপুর উপজেলায় সরকারের এ নির্দেশ মানা হচ্ছেনা। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইটভাটা মালিক জানান, আমাদের ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর জন্য প্রশাসন সহ সকল কে ম্যানেজ করার জন্য একটি তহবিল আছে তাই আমরা অবাধে কাঠ পোড়ানোর সাহস পাচ্ছি। সে কথার বাস্তবতা লক্ষ্য করা গেছে এখানকার প্রতিটি ইটভাটায়। সেখানে মজুদ করা বিপুল পরিমান কাঠের গুড়ি ও খড়ি থাকা সত্বেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। দৌলতপুর সহ আশেপাশের বনজ সম্পদ উজাড় করে অবশেষে দেশের দক্ষিণ অঞ্চল থেকে প্রতিদিন ট্রাক ট্রাক খড়ি দৌলতপুরের এসব ইটভাটায় মজুদ করে তা পোড়ানো হচ্ছে। দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কুমার মন্ডল এ প্রসঙ্গে বলেন, জেলা প্রশাসনের ছাড়পত্র ব্যতিত যেসব ইটভাটায় অবৈধভাবে ইট প্রস্তুত করার খবর পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারপরও এসকল ইট ভাটাতে শুধুমাত্র কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। কোন ইটভাটায় বিন্দুমাত্র কয়লা খুজে পাওয়া যায়নি। এদিকে উপজেলা পরিদের মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যে ৭ টি ও দৌলতপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চারপাশে ৫ টি ইটভাটা স্থাপন ও অনুমোদন কিভাবে হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও তার জবাব মেলেনি। অত্যান্ত জনবহুল এলাকায় কিভাবে ঐ ১১ টি ইট ভাটা মালিক পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড় পত্র পেল তা এলাকাবাসী ও সচেতন মহলের বোধগম্য নয়। তাছাড়া জনবহুল এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করায় শিশুসহ সবধরনের মানুষের শ্বাসকষ্ট,হাপানী, যক্ষা,চর্ম সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন