মঙ্গলবার, জানুয়ারী ১৫, ২০১৩

নারী নির্যাতন বাড়ছেই : নজর নেই আইন-শৃংখলা বাহিনীর


হাওয়া ডেস্ক : বাংলাদেশে গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে যতই হইচই হোক, রাজধানীসহ জেলা-উপজেলায় মহিলাদের ওপর অপরাধের ক্রমবর্ধমান ঘটনা নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন নজর দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার শিশু ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল, মহিলা পরিষদ, ‘অধিকার’সহ সরকারি-বেসরকারি সংগঠনের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, দিন দিন মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা বেড়েই চলেছে। ২০১১ সালে খোদ রাজধানীতে যতগুলো
নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, তার থেকে বেশি সংখ্যক ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে ২০১২ সালে। নতুন বছরের প্রথম মাসের প্রথম সপ্তাহেই রাজধানীসহ সারাদেশে কমপক্ষে ২১৯টি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১ জন। ধর্ষণের মামলা হয়েছে প্রায় ৪৩ হাজার ৩৫৬টি। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৫৬ জনকে। অপরাধের ঘটনা বাড়ছে রাজধানী, জেলা, উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়েও। গত বছর ডিসেম্বরে নির্যাতন মামলা হয়েছে। যার মধ্যে ১৩ হাজারের চেয়েও বেশি মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। কয়েকটি মামলার বিচার সম্পূর্ণ হয়েছে ত
বে প্রায় ৮৫ শতাংশ মামলাই ঝুলে রয়েছে। মহিলা পরিষদ সভাপতি আসমা খানম জানান, সারাদেশেই মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ বাড়ছে। কয়েক মাসে মহিলা ও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ যেভাবে দ্রুত হারে বাড়ছে তা খুবই উদ্বেগজনক। নারী ও শিশু নির্যাতন যেমন বাড়ছে, তেমনি ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার সংখ্যাও বাড়ছে। এসিড নিক্ষেপ কমে আসলেও বাড়ছে ধর্ষণ ও নির্যাতন। রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে কমবেশি সর্বত্র আকস্মিকভাবে বেড়ে গেছে মেয়েদের ওপর অত্যাচার। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ক্রাইম পরিসংখ্যান রেকর্ডে বলা হয়েছে, আধুনিকতার সঙ্গে বেড়েছে ধর্ষণের ঘটনা। ২০১১ সালে ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল ৩ হাজার ৬৩৮টি। ২০১২ সালে প্রায় ৩৮ হাজার ৪৩৭টি। সূত্রে জানা যায়, শুধু বস্তি এলাকায়ই নয়, অভিজাত এলাকায়ও হরহামেশা শিশু ও নারী নির্যাতনের পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। সময়ের সঙ্গে দ্রুত বাড়ছে নির্যাতন ও অপরাধের সংখ্যাও।
শুধু অপরাধ বেড়ে চলাই নয়, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের শাস্তি দেয়ার হারও খুব কম। অভিযোগ রয়েছে, ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধেও দোষীদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে মামলায় শাস্তির রায় পুলিশ বের করে আনতে পারছে না। পুলিশ ক্রাইম রেকর্ড জানাচ্ছে, দেশে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা বাড়লেও তা আদালতে পৌঁছে দীর্ঘদিন আটকে থাকছে। ২০১২ সালে যে পরিমাণ মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে তার ৮৫-৮৭ শতাংশ আটকে রয়েছে। অসংখ্য অপরাধের মামলার মধ্যে স্থান করে নেয়া সেই সঙ্গে তদন্তকারী পুলিশের কম সময়ের মধ্যে চার্জশিট দেয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, দেশে প্রতি বছর যত ধর্ষণের অভিযোগ জমা পড়ছে তার এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রেই পুলিশ চার্জশিট দিতে পারছে না। এক থানায় তদন্তকারী অফিসারদের হাতে মাত্রাতিরিক্ত কেস থাকায় আলাদা করে ধর্ষণের মতো গর্হিত অপরাধ নিয়ে তদন্ত করার সময় তারা কম পাচ্ছেন। এক থানা থেকে অন্য থানায় গিয়ে আদালদেতর নিয়ম মেনে সাক্ষ্য দিতে আসা আর হয়ে ওঠে না। ফলে ক্রমশ দীর্ঘায়িত হতে থাকে ধর্ষণের বিচার ব্যবস্থা। বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিষ্টার সারা হোসেন বলেন, ধর্ষণের ধরন পাল্টে যাচ্ছে, ধর্ষকদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় বিচার ব্যবস্থা বিষয়ে মানুষকে অবগত করাতে হবে। আদালতে মামলাজট থাকলে মানুষ ন্যায়বিচারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার এটিএম হাবীবুর রহমান বলেন, শিশু ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, পুলিশ যদি তাদের (র‌্যাপ) প্রয়োজন মনে করেন তাহলে যে কোন সময় তার সংস্থা এগিয়ে আসবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন