মঙ্গলবার, জানুয়ারী ১৫, ২০১৩

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ভয়ে শিক্ষক শূন্য ক্যাম্পাস


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ভয়ে শিক্ষক শূণ্য হয়ে পড়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে শিক্ষকদের উপর ছাত্রলীগ ক্যাডারদের দু‘দফা হামলার ঘটনায়হামলাকারীদেরোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় শিক্ষকরা
শিনরাপত্তাহীন ক্যাম্পাসে না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে দীর্ঘ সাড়ে ৪ মাস ধরে অচল ক্যাম্পাস আরো গভীর অশ্চিয়তার দিকে ধাবিত হলো।
এদিকে শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনার জড়িতদের বিচার ও সমঝোতার মাধ্যমে ক্যাম্পাস সচলের আহবান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শাপলা ফোরামের শিক্ষকরা।
সূত্র মতে- শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনায় গতকাল সোমবার ক্যাম্পাস পরিস্থিতি ছিলো থমথমে। দ্বিতীয় দফায় হামলায় আহত আন্দোলনকারী শিক্ষকরা ছিলো বিমর্ষ। হতাশা, ক্ষোভ আর লজ্জায় বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জিয়া পরিষদ ও গ্রীণ ফোরামের শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে আসেননি। ফলে অধিকাংশ বিভাগের তালাই খোলা হয়নি। দীর্ঘ সাড়ে ৪ মাস পরে ক্লাস-পরীক্ষার আশায় শতশত শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আসলেও ক্লাস না হওয়ায় তারা হতাশ হয়ে ফিরে যায়। তবে প্রশাসনের আশির্বাদপুষ্ট শাপলা ফোরামের কিছু শিক্ষক কয়েকটি বিভাগে ক্লাস নিয়েছেন।
এদিকে গত রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জিয়া পরিষদ ও গ্রিন ফোরাম পৃথক পৃথক বৈঠক করে শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে নিরাপত্তাহীন ক্যাম্পাসে না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরে সংগঠন তিনটির নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বিবৃতির মাধ্যমে জানান, শিক্ষকদের উপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত করে সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। সেই সাথে হামলার ঘটনার প্রত্যক্ষ মদত দেওয়ায় প্রক্টর ড. এএইচএম আক্তারুল ইসলাম জিল্লু ও ছাত্র উপদেষ্টা ড. তালুকদার লোকমান হাকিমকে তাদের পদ থেকে অপসারণ করতে হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন বর্তমান প্রক্টর ও ছাত্রউপদেষ্টা স্বপদে বহাল থাকা অবস্থায় শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে নিরাপদ নয়। তারা দায়িত্বে থাকা অবস্থায় কোন শিক্ষক ক্যাম্পাসে যাবেন না।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. রুহুল কে এম সালেহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে। শিক্ষকদের মারধর করা হচ্ছে। প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অথচ এর কোন বিচার নেই। তাই এর বিচার আল্লাহর কাছে দিয়ে দিয়েছি। আল্লাহই এর বিচার করবে।’
জিয়া পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. আলীনুর রহমান বলেন-‘ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের কোন নিরাপত্তা নেই। প্রক্টর ও ছাত্রউপদেষ্টার উপস্থিতি ও ইন্ধনে যেখানে শিক্ষকদের উপর সন্ত্রাসী হামলা হয় সেখানে অন্তত: শিক্ষক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে লজ্জা হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রক্টর ও ছাত্রউপদেষ্টা স্বপদে বহাল আছেন ততক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে যাবেন না।’
গ্রীণ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. আ ছ ম তরিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন-‘বার বার শিক্ষকদের উপর হামলা হলেও প্রশাসন হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগীতায় শিক্ষকদের উপর হামলা হয়েছে। যতদিন শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হবে ততদিন শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে যাবেন না।’
এদিকে বেলা ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনের আশির্বাদপুষ্ট শাপলা ফোরাম অনুষদ ভবনে প্রক্টরের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এসময় শাপলা ফোরামের সভাপতি মাহবুবুল আরফিন লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে শাপলা ফোরামের শিক্ষকরা ক্যাম্পাস স্বাভাবিক করার ব্যাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। শাপলা ফোরামের শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন বলে তিনি দাবি করেন। এছাড়া ক্যাম্পাস স্বাভাবিক করার ব্যাপারে প্রশাসনকে দলমত নির্বিশেষে সকল শিক্ষককে সহযোগিতা করার আহবান জানান। এছাড়া শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি দাবি করেন।
এব্যাপারে ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুল হাকিমের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল নাম্বারই বন্ধ রয়েছে। ভিসি হঠাৎ করে ঢাকায় চলে গেছেন বলে তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। আগামী শনিবারের আগে তিনি ক্যাম্পাসে ফিরবেন না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন