বুধবার, ফেব্রুয়ারী ২০, ২০১৩

ফারাক্কায় পানি না দিতে এবারও জলবায়ু পরিবর্তনের অজুহাত ভারতের

হাওয়া ডেস্ক : গঙ্গার ফারাক্কায় পয়েন্টে বাংলাদেশকে ন্যায্য হিস্যা দিতে ব্যর্থতার জন্য আবারো জলবায়ু পরিবর্তনের অজুহাত দেখিয়েছে ভারত . এর পাশাপাশি ভারত গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিতে ১৯৯৬ সালে সম্পাদিত গঙ্গা চুক্তির ২-এর ২ ধারা মেনে চলতে কোনো ধরনের আশ্বাস দেয়নি দেশটি। জানা গেছে, সম্প্রতি ফারাক্কায় গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন ও চুক্তি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি যথাযথভাবে মেনে চলতে ভারতকে তাগিদ দেয়। এতে গঙ্গার ফারাক্কায় পয়েন্টে বাংলাদেশকে তার ন্যায্য হিস্যা দিতে ভারতকে আহবান জানানো হয়। রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় ওই বৈঠকটি। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও যৌথ নদী কমিশনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বৈঠকটির ব্যাপারে আরো জানায় যে, ১৯৯৬ সালে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত গঙ্গা চুক্তির প্রথম ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশকে গঙ্গার পানির হিস্যা দেয়া হলেও চুক্তির ২-এর ২ ধারা লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে ভারতের যৌথ নদী কমিশনের প্রতিনিধিদলকে অবহিত করা হয়। গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর বন্টন কার্যক্রম শেষে উভয় দেশে প্রতিনিধি দলের যৌথ সম্মতি গ্রহণে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
 বৈঠকে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ভারত গঙ্গায় চুক্তি অনুযায়ী এর ইন্ডিকেটিভ সিডিওল অনুযায়ী পানি ভাগাভাগির তাগিদ দেয় বাংলাদেশ। ভারতের প্রতিনিধি দলকে জানায় হয় যে, গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী ১৯৪৮ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত চল্লিশ বছরে গঙ্গার ফারাক্কা পয়েন্টে যে পানি প্রবাহ ছিল, শুষ্ক মৌসুমে তা নিশ্চিত করার কথা থাকলেও ভারত তা মেনে চলছে না। বৈঠকে প্রতিনিধিদলটিকে জানানো হয় যে, প্রতিবারের মত এবারও ভারত ফারাক্কা পয়েন্টে সেই ঐতিহাসিক প্রবাহ নিশ্চিত না করে পানি কম দিয়েছে। গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী ভারত-বাংলাদেশ মিলে পানি প্রবাহ বাড়াতে সর্বাত্বক চেষ্টা করার কথা রয়েছে। তবে চুক্তি অনুযায়ী ন্যায্য হিস্যা দাবি করে বাংলাদেশের প্রতিবাদও আমলে নিচ্ছে নেয়নি ভারত। উজানে পানি কম ও একিই সাথে কাইমেট চেঞ্জ এর কথা বলে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে ভারত। একই সাথে চুক্তি অনুযায়ী পানি ভাগাভাগির নীতি আগামীতে অনুসরণে গ্যারান্টিও দেয়নি দেশটি। এছাড়া ছাড়া একিই বৈঠকে তিস্তা নিয়ে কোনো ধরণের অলোচনা আগ্রহ দেখায়নি ভারত। যৌথ নদী কমিশনের বাংলাদেশ পরে নেতৃত্ব দেন ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মীর সাজ্জাদ হোসেন। অপরদিকে ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দেন কমিশনার (গঙ্গা) এন কে মাথুর। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য পানি কম পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনে বরফ আরো বেশি গলে পানি প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়ার কথা। কিন্তু মার্চ-এপ্রিলেও গঙ্গায় পানি প্রবাহ বাড়ছে না। আসলে উজানে অনেক প্রকল্প করে পানি সরিয়ে নেয়ার কারণে গঙ্গার ফারাক্কা পয়েন্টে পাইন কম আসছে। গঙ্গার পানি বন্টন নিয়ে ৩০ বছর মেয়াদী চুক্তি অনুযায়ী ফারাক্কা পয়েন্টে চারটি কিস্তিতে মোট প্রায় ৫০ হাজার কিউসেক পানি কম পেয়েছে বাংলাদেশ। চুক্তির ইন্ডিকেটিভ সিডিউল অনুযায়ী বাংলাদেশ পাবার কথা ছিল দুই লাখ একুশ হাজার ছয়শত ছিষট্টি কিউসেক, কিন্তু পেয়েছে এক লাখ বিরাশি হাজার ২৭ কিউসেক পানি। ফলে জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট চারটি কিস্তিতে ৪৯ হাজার ৬৩৯ কিউসেক পানি কম পেয়েছে ভারত থেকে। প্রতি বছর ১ জানুয়ারি হতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি বণ্টন কার্যক্রম শুরু হয়ে থাকে, চলে মে’র ৩০ তারিখ পর্যন্ত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন