- বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, বর্ণাশ্রম প্রথা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আজন্ম প্রতিবাদি এবং যুক্তি-বিচার, জগত জীবন সম্পর্কে সত্যানুসন্ধানী মানবপ্রেমিক, গ্রামীন জনপদের সহজ মানুষকে জাগরিত করবার পথিকৃত বাউল স¤্রাট ফকির লালন শাহ্’র স্মরণোৎসবে আলোচনা সভা ও লালন সংগীত অনুষ্ঠিত হয়।গতকাল ২১ মার্চ শুক্রবার, বিকেল সাড়ে ৩টায় কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কুষ্টিয়া’র আয়োজনে অনুষ্ঠানটি পালিত হয়। সেখানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, বিশিষ্ট গনসংগীত শিল্পী ও কেন্দ্রীয় সংগঠক মাহ্মুদুজ্জামান বাবু, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক স্বপন কুমার রায়, বাসদ কুষ্টিয়া জেলা আহ্বায়ক কমরেড শফিউর রহমান শফি। সভাপতিত্ব করেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কুষ্টিয়ার সভাপতি জামাল উদ্দিন খান। আলোচনা শেষে লালন সংগীত পরিবেশিত হয়। লালন দর্শনের আলোকে বক্তব্যে বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, আমাদের দেশটাকে বলা হয় গানের দেশ। এদেশের জলে, স্থলে আকাশে-বাতাসে সুর মিশে আছে। পলি মাটি দিয়ে গড়া এদেশের মানুষের মনটাও নাকি পলি মাটির মত নরম। সুরের ছোয়ায় সহজেই আপ্লুত হয়। তার রসে ভক্তি রসে সহজে সিক্ত হয়। এই কারনেই যুগে যুগে বহু কবি, শিল্পী তাদের গানে কবিতায় সুরে বাংলার মানুষকে কাঁদিয়েছেন-হাসিয়েছেন। বাণী ও সুরের মুর্ছনায় মানুষের মনের মনি কোঠায় ঠাই করে নিয়েছেন। এদের অনেকে হারিয়ে গিয়েছেন। আবার কেউ মানুষের মাঝে বেঁচে আছেন। তার পরেও সব কিছু হারায় না। অনেক কিছুই মাথা তুলে দাঁড়ায়, যা নতুন যুগের নতুন মানুষদের নাড়া দেয়। লালন ফকির আর তার গান এমনি এক যুগান্তকারী দিক দর্শন। তিনি জীবদ্দশায় যে গান রচনা করেছিলেন তা দেড়শত বছর পার হয়েছে তবুও তার গান আজও সব বয়সের, সব ধরণের মানুষকে চিন্তা দেয়, আনন্দ দেয়, ভাব-রসে আন্দোলিত, ভক্তি রসে সিক্ত করে। বাউলদের গানে সুফিতত্ত্ব, দেহতত্ত্ব, সৃষ্টি তত্ত্ব, আত্মতত্ত্ব ও মনোনতত্ত্ব, সাধনতত্ত্ব, পরমাত্মা, রুপ-স্বরুপ তত্ত্ব ইত্যাদি বহু তত্ত্বের কথার মারপেচ ছড়িয়ে আছে। এসব কথা সাধারণ শ্রোতার বুঝার কথা নয়, তবুও প্রায় দেড় দুইশত বছর আগে লালনের গানে এইসব আছে। কিন্তু তার পরেও কেন লালনের গান আমাদের মননে দোলা দেয় কারনÑ লালন তার গানে আমাদের কালের উপযোগিতা দিয়েছে। তাইতো লালনের জীবন ও সমাজ জিজ্ঞাসা আজও অতি প্রাসঙ্গিক। সমাজের ভেদাভেদ, গর্ব অহংকার, বর্ণ-বৈষম্য, হীনমন্যতা, অসামাজিক আচরণ লালন মননে দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। তাই সেটাই তিনি প্রকাশ করেছেন তার গানে। লালন সেদিন সমাজের মানব চরিত্রে যে সব ত্র“টি ও অসংগতির দিকে অঙ্গলি দির্নেশ করেছিলেন তা আজও বিদ্যমান। আজকের দিনে সমাজ, মনোস্ক যে কোন মানুষকে লালনের গান আকৃষ্ট করে ও শক্তি দেয়। ধর্মের নামে ভন্ডামির দিকে আঙ্গুল তুলে লালন বলেছেনÑ ‘‘ভিতরে লালসার থলি,/ উপরে জল ঢালাঢালি লালন কং মন মুসল্লী,/ আসল তোর হলো না মনি। আবার বলেছেন এসব দেখি কানার হাট বাজার, বেত বিধির পর শাস্ত্র কানা। আর এক কানা মন আমার/ পন্ডিত কানা অহংকারে সাধূ কানা অম্বিচারে/ মোড়ল কানা চুকুল খোরে/ আন্দাজি এক খুটি গেড়ে। চেনে না সীমানা কার। বুঝায় যায় ধর্ম ব্যবসায়ী এবং সবাজপ্রতিদের কি প্রবল ঘৃনায় তিনি আক্রমন করেছেন তার গানে। প্রত্যক্ষ শ্রেণী শোসনের ইংগিতও তার গানে পাওয়া যায় ‘‘রাজেশ্বর রাজা যিনি চোরেরও শিরমনি/ নালিশ করিব আমি/কোন খানে কার নিকটে/ গেলো গেলো ধন মাল আমার খালি ঘর দেখি জমাই /লালন কয় খাজনার দায়/ তাও কবে যায় রাটে। সমাজের জাত পাতের বিভেদ তাকে ক্ষত বিক্ষত করেছে আর তাই তিনি প্রবলভাবে আক্রমন করেছেন সেই বিভেদ ভেদকে। ‘‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে”/ লালন বলে জাতেদর কিরুপ দেখলাম না দুই নজরে/ জাতি ভেদের বিষয়টিকে নিয়ে বিচার করেছেন বাস্তব জ্ঞান দিয়ে। ‘‘আসবার কালে কি জাত ছিলে/ এসে তুমি কি জাত নিলে/ কি জাত হবা যাবার কালে সে কথা