মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৩

ইবি প্রশাসন টিএসসিসিকে পুলিশ ‘ব্যারাকে’ পরিনত করেছে : বিড়ম্বনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

ইবি প্রতিনিধি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র টিএসসিসি’র গুরুত্বপুর্ন জায়গাগুলো ক্রমেই বেদখল হতে চলেছে। সংস্কৃতির চর্চার পরিবর্তে টিএসসিসির কক্ষগুলো পুলিশ ‘ব্যারাক’ ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে সংস্কৃতি চর্চা। টিএসসিসিতে থাকা এসব পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচরণ ও টিএসসিসি’র পরিবেশ নষ্ট করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ ঊঠেছে।জানা যায়, দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশের একমাত্র সৌন্দর্যপুর্ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ শহর থেকে প্রায় ২৫ কিমি দূরে শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুর নামক স্থানে অবস্থিত। ক্যাম্পাসের ভেতরে রয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা (ইবি থানা) নামে একটি থানা। এ থানার অধীনে ১১৯ পুলিশ সদস্য কর্মরত রয়েছেন। জানা যায়, অবস্থানগত কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও উদ্ভ’ত পরিস্থিতিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার সময় ইবি থানার পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে রীতিমত হিমশীম খেতে হয়। এছাড়া ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স আসতে আসতে সংঘর্ষ গুরুতর আকার ধারণ করে। ফলে কোনো কোনো সময় খুনখারাপি পর্যন্ত ঘটে যায়। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আলাউদ্দিন অতিরিক্ত পুলিশ চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বরাবর একটি আবেদন করেন। লিখিত ওই আবেদনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আলাউদ্দিন ক্যাম্পাসের জন্য নির্দিষ্ট কিছু রিজার্ভ পুলিশ রাখার দাবি জানান। উপাচার্যের ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় পুলিশ রাখার জন্য অনুমোদন দেন। এ অনুমোদনের পর থেকে ৪০ জন পুলিশ সদস্য রাখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। আবারও নতুন করে ৩০ জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এসব পুলিশ সদস্যদের থাকার জায়গা হিসাবে টিএসসিসি’র ১১৬ নং কক্ষটি ও কেন্দ্রীয় ক্যাফটেরিয়া সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা লাউঞ্জকে নির্ধারণ করেছে। এসব পুলিশ খুলনা ডিআইজি’র অধীনে ৬৮ জন পুলিশ সদস্য নরমাল ডিউটি হিসাবে ক্যাম্পাসে দায়িত্ব পালন করছেন। জানা যায়, টিএসসিসি ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আন্তর্জাতিক ব্লকের ডাইনিংয়ের জায়গা দখল করে আরও ১০ জন পুলিশ সদস্য সেখানে থাকেন। এসব পুলিশ সদস্যদের জন্য আলাদা কোনো টয়লেট-গোসলখানা নেই। ফলে টিএসসিসি’র টয়লেটের উপর তাদের নির্ভর করতে হয়। এমনকি তারা গোসলের কাজ টয়লেট ও বেসিনের পানি দিয়েই সারেন। এতে করে শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তির স্বীকার হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষার্থী বলেন, টিএসসিসিতে এমনিতেই টয়লেট সংখ্যা অপর্যাপ্ত। তারপর সেগুলো পুলিশ নিয়মিত ব্যবহার করছে। ফলে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে।’এবং টিএসসিসিতে থাকা পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ধূমপান, গাজাঁ, ছাত্রীদের সাথে অশোভন আচরণ, ইভটিজিং, মোবাইলে ছবি তোলা, উচ্চ শব্দে গান শোনা, অনৈতিক কাজ করে।।
হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী মৌমিতা আক্তার ববি অভিযোগ করে বলেন,‘ ক্যাম্পাস চলাকালে টিএসসিসিতে গেলেই দেখা যায় পুলিশ সদস্যরা প্রকাশ্যে ধূমপান করছেন। এছাড়া তারা গোসল শেষে গামছা পড়ে খালি গায়ে আপত্তিকর অবস্থায় চলাফেরা করেন যা আমাদের কাছে খুবই লজ্জাজনক ও বেমানান। এছাড়া তারা মাঝে মধ্যে মোবাইল ফোন দিয়ে ছাত্রীদের ছবি উঠান বলে তিনি জানান। অন্যদিকে টিএসসিসি’র কক্ষগুলো আস্তে আস্তে বেদখল হয়ে যাওয়ায় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সংস্কৃতি চর্চা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিবেটিং সোসাইটি, বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার, ব্যতিক্রম, আবৃত্তি আবৃত্তি, রম্যহাট, উদীচি শিল্প গোষ্ঠী,মুক্ত বাংলাসহ প্রায় ৩৪টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। এসব সংগঠনের কার্যক্রম মূলত টিএসসিসিকে ঘিরে। তবে এসব সংগঠনের জন্য আলাদা কোনো কক্ষ বরাদ্দ না থাকায় করিডোরেই চলে তাদের কার্যক্রম। কিন্তু করিডোরে পুলিশ সদস্যদের অবাধ বিচরনের কারনে সেটাও এখন হচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এসব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা। এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছক এক কর্র্মকর্তা বলেন, আমাদের জন্য নির্ধারিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা লাউঞ্জ এখন পুলিশ রাখার ব্যারাক। সেখানে আমরা নাস্তা করতে পারছিনা।এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার কর্মী বলেন,এই কক্ষটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, কনফারেন্স, সাংস্কৃতিক চর্চাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হত। কিন্তু বর্তমানে একক্ষটিকে প্রশাসন পুলিশের ব্যারাকে পরিনত করায় আমারা সঠিকভাবে আমাদেও সাংস্কৃতি চর্চা করতে পারছিনা।এ বিষয়ে টিএসসিসিতে অবস্থানকারী সাব ইন্সপেক্টর আবু তৈয়ব বলেন,‘ টিএসসিসিতে টয়লেট ও গোসল করতে আমরাও বিব্রতবোধ করি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের থাকার জন্য আলাদা জায়গা করে দেবে বলে অনেক আগে শুনেছিলাম। তবে সেটা এখনও হয়নি। এখানে গাদাগাদি করে থাকতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। তিনি আরও বলেন,এখানে অবস্থান করায় আমরা অস্ত্র নিরাপত্তাহীনতার আশংকা করছি।ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। ভিসি স্যার আশ্বাস দিয়েছেন, থানার পূর্বপাশে একটি আধাপাকা টিনশেড বিল্ডিং করে এসব পুলিশদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। এটা করা হলে সমস্যার লাঘব হবে।’ প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন,‘ বিষয়টি ভিসি স্যারকে জানান হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে এটা বলেছেন। আশা করি অতিদ্রুত ওই ভবনের কাজ শুরু হবে। ভবনের কাজ শেষ হলে পুলিশদের সরিয়ে দেওয়া হবে।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন