রবিবার, জুলাই ১৩, ২০১৪

কুমারখালীতে কমিউনিটি পুলিশিং বিষয়ক ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত

শরীফুল ইসলাম, কুমারখালী: “থানার দুয়ার খোলা আজি, আসিতে নাহি মানা”এ শ্লোগান নিয়ে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদ সভাকক্ষে বেলা ১১টায় ওপেন হাউজ ডে শুরু হয়ে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। ওপেন হাইজ ডে অনুষ্ঠানে কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ লুৎফর রহমান’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপারেশন) আবু বকর সিদ্দীক। শুভেচ্ছা বক্তব্যে কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন- পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ। এ ম্লোগান বাস্তবে রুপ নেয়। এলাকার অপারাধ দমন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের সহায়ক শক্তি হিসেবে একটি গণফোরম তৈরী হওয়ায় অপরাধীরা নির্বিঘেœ অপরাধ সংঘটনের সাহস পায় না। সমাজে অপরাধ হ্রাস পায়। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত হয় এবং জনগণের জীবন যাত্রার মান উন্নত হয়। কমিউনিটি পুলিশিং হচ্ছে অপরাধ সমস্যা সমাধানে পুলিশ ও জনগণের যৌথ অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার একটি নতুন পুলিশিং দর্শন। আমাদের দেশে পুলিশী কর্মকা-ে জনগণের অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কার্যকরভাবে অপরাধ প্রতিরোধের জন্য কমিউনিটি পুলিশিং ধারণা গ্রহণ করা হয়েছে। কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা কমিউনিটির সদস্যগণ, সমাজের বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং পুলিশের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অপরাধ প্রতিরোধ ও জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয় কমিউনিটি পুলিশিং মূলত একটি প্রতিরোধমূলক পুলিশি ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় অপরাধের কারণগুলো অনুসন্ধান করে সেগুলো দূর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। অপরাধের কারণগুলো দূর করা যেহেতু পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয় তাই এই কাজে অন্যান্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়। কমিউনিটি পুলিশিং এর যাবতীয় কর্মকা- অপরাধ প্রতিরোধ তথা অপরাধ যাতে ঘটতে না পারে সেই লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার মাধ্যমে পুলিশ জনগণকে নিজেরাই যাতে নিজ নিজ এলাকার অপরাধগুলো প্রতিরোধ করতে পারে তার জন্য জনগণকে আইনী পরামর্শ দেওয়া, অপরাধ সম্পর্কে সচেতন করা, অপরাধকর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য বা পরামর্শ দেওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে ক্ষমতায়ন করে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপারেশন) আবু বকর সিদ্দীক বলেছেন, ইভটিজিং, মাদকের অপব্যবহার করার মতো সামাজিক অপরাধমূলক কাজগুলো প্রতিরোধে আইন প্রয়োগের পাশাপশি সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে।

ইভটিজিং ও মাদকের সচেতনার জন্য পরিবার থেকেই প্রথম শিক্ষা নিতে হবে উল্লেখ করে বলেন, একটি পরিবারের বাবা-মা এবং শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষকরা যদি ছোটবেলা হতেই এসব বিষয়ে শিক্ষা দেন তাহলে এসব বিষয় প্রতিরোধ সহজ হবে। ইভটিজিং প্রতিরোধে আইনের পাশাপাশি সমাজের পুরুষ এবং নারী উভয়কেই এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
 ছাত্রীদের উদ্দেশ্য করে প্রধান অতিথি বলেন, কোন ছাত্রী যদি ইভটিজিং এর শিকার হয়, এ সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে অভিযোগকারির পরিচয় গোপন রেখে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য থানায় নির্দেশ দেওয়া আছে। শুধুমাত্র একবার আপনার অভিযোগ জানান, পরবর্তী ব্যবস্থা পুলিশই নিবে। পুলিশের কর্মকান্ডের বিষয়ে প্রধান অতিথি বলেন, পুলিশের কোন অন্যায় কাজ দেখলে তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিন। পুলিশও মানুষ এবং একই সাথে এই সমাজেরই অংশ। ফলে পুলিশের অন্যায়ের প্রতিবাদ করা দেশের প্রতিটি নাগরিকের অবশ্য কর্তব্যের মধ্যে একটি। আমাদের সমাজে চুরি-ডাকাতির ভয়াবহতা চেয়েও মাদকের ভয়াবহতা বেশী, যে পরিবারে একজন মাদকাসক্ত আছে সে পরিবারটির ধ্বংস অনিবার্য। প্রধান অতিথি ওই আশঙ্কা ব্যাক্ত করেন। তিনি বলেন, মাদকের ভয়াবহতা থেকে উত্তরণ ঘটাতে শুধু পুলিশের উপর নির্ভর করলেই চলবেনা, সমাজের সর্বস্তরের মানুষ মাদক প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে।ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন- এখন থেকে ইভটিজিং প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত পুলিশী টহল থাকবে।  প্রধান অতিথি আরও বলেন- জনগনের সক্রিয় সহযোগিতা না থাকলে এ বিশাল জনসংখ্যার নিরাপত্তা দেয়া পুলিশের একা সম্ভব নয়। ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হইলে পুলিশকে জনগন সতস্ফুর্ত ভাবে সহযোগিতা করতে হবে। তাহলেই এলাকার আইন শৃঙ্খলা শান্তিপূর্ণসহ অপরাধীদেরকে আমরা চিহ্নিত করতে পারবো। সঠিক তথ্যের মাধ্যমে পুলিশকে তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য তিনি সাংবাদিকদের বিশেষ অনুরোধ জানান।  বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিলাইদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন খান তারেক বলেন- মাদক নির্মূল পুলিশের কাজ নয়। এর জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদফতর রয়েছে। এরপরও যুবসমাজকে অবক্ষয় থেকে রক্ষায় মাদক নির্মূলে ভূমিকা রাখছে পুলিশ। অনুষ্ঠানে আরও বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারমান।
আলোচকগন মাদক, যৌতুক, বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখার উপর জোর দেন। বাল্য বিবাহের কারণগুলোর মধ্যে দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, অসচেনতা, সামাজিক কুসংস্কার, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদিই প্রধান। এই সব কারণের বেশির ভাগই পুলিশ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত নয় বলে পুলিশের পক্ষে এই সব কারণ দূর করা সম্ভব নয়। তাই, কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাকে কার্যকর করার মাধ্যমে পুলিশ কর্তৃপক্ষ কতিপয় বিষয় আশু সমাধান করতে পারে। কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের সচেতনতামূলক কর্মকা- পরিচালনা, যেমন- ছোট ছোট সভা, রেলি, বিলবোর্ড স্থাপন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রতিরোধমূলক মনোভাব তৈরি করা যেতে পারে।
নাবালকের পিতা-মাতা, বিশেষ করে মেয়ের অভিভাবকগণ, বর্তমানে রেজিস্ট্রি করা ছাড়া বিয়ে দিতে রাজি হয় না। তাই, বিবাহ রেজিস্ট্রারদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে এই সমস্যার আপাতত অনেকটা সুরাহা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সহায়তায় স্থানীয় কাজীদের নিয়ে মিটিং করতে পারে। মিটিং এ সকল কাজী প্রতিশ্রুতি দিবেন যে তারা পাত্র-পাত্রীদের সরকারিভাবে স্বীকৃত বয়স প্রমাণের সনদ ছাড়া কোন বিবাহ রেজিস্ট্রি করবেন না। এ ক্ষেত্রে তারা বালিকার স্কুল কর্তৃপক্ষের পঞ্চম, অষ্টম শ্রেণী পাশ এবং সম্ভব হলে এসএসসি পরীক্ষার সনদপত্রের উপর নির্ভর করবেন। ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক প্রদেয় জন্ম সনদপত্র কিংবা নোটারী পাবলিকের এফিডেভিট পত্রকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সনদের সাথে মিলিয়ে না দেখা পর্যন্ত তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন না।
এর পরও কোন কাজী বাল্য বিবাহ রেজিস্ট্রি করলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে অনুসন্ধান করে তা থানায় রক্ষিত সাধারণ ডায়েরী বহিতে লিপিবদ্ধ করে তার কপি বিবাহ রেজিস্ট্রারের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো যেতে পারে। কোন কাজী প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করলে তার অধীনে সকল সাব-কাজীর কার্যক্রম বন্ধ করা যেতে পারে। কারণ, বিবাহ রেজিস্ট্রারদের নিবন্ধন আইন অনুসারে কোন কাজী তার অধীনে কোন সাব কাজী রাখতে পারেন না কিংবা বিবাহ রেজিস্ট্রারগুলো অন্য কোন ব্যক্তির নিকট হস্তান্তর করতে পারেন না। এর ফলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই ভবিষ্যতে আর এই জাতীয় কাজ করবে না। পুলিশ কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সদস্যদের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হবে।
এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ও সাবেক সদস্যবৃন্দ সহ বিভিন্ন এলাকার পুলিশিং কমিটির সদস্য, শিক্ষক, মসজিদের ঈমাম সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার প্রতিনিধি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন