মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৪

দৌলতপুর সাব-রেজিষ্ট্রিার অফিসে অনিয়ম ও দূনীতি জেঁকে বসেছে

দৌলতপুর প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা সাব-রেজিষ্টার অফিসে অনিয়ম ও দূনীতি জেঁকে বসেছে, বিভিন্ন ফিসের নামে ঘুষের পরিমান দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে। দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে অফিসটি। বিভিন্ন ফিসের নামে জমি ক্রয় বিক্রয় করতে আসা এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এসকল ফিস ও বেড়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে এলাকার সাধারণ মানুষ। অনুসন্ধানে জানাগেছে দৌলতপুর সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে দৈনিক গড়ে ২০০ টির বেশি দলিল সম্পন্ন হয়। প্রতি দলিলে গ্রহিতাদের সরকারি ফি ছাড়াও অতিরিক্ত ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। একটি সাফ কবলা দলিল করতে ২ শতাংশ জমির জন্য ১৩ হাজার টাকারও বেশি খরচ হয়। এ থেকে পরিত্রাণ
পাবার সুযোগ হারিয়েছে এলাকার সাধারণ মানুষ। কারণ রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন পর্যায়ের লোকদের ম্যানেজ করে এসকল অপকর্ম চালিয়ে আসছে এই অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দলিল লেখক জানান, ৭০ হাজার টাকা মুল্যের ২ শতাংশ জমি সাফ কবলা দলিল করতে হাজারে ৭০ টাকা হারে মোট ৪৯০০ টাকার স্ট্যাম্প মূল্যের সঙ্গে হলফনামা বাবদ ৫০০ টাকা, চালান বাবদ ১৫০০ টাকা, তার দলিল লেখক সমিতির চাঁদা, পর্চা বাবদ ৫০০ টাকা, সাব রেজিষ্ট্রারের চাঁদা বা দাখিল ফিস বাবদ ১০০০ টাকা, অন্যান্য ফিস ৩০০ টাকা, দলিল লেখকের লেখা বাবদ ৫০০ টাকা সহ মোট ১৩২০০ টাকা খরচ হয়। এভাবে প্রতি দলিলে অতিরিক্ত সাব রেজিষ্ট্রার দাখিল ফিস, অন্যান্য ফিস ও পর্চা বাবদ (১০০০+৩০০+৫০০) ১৮০০ টাকা হিসাবে প্রতিদিন ২০০ টি দলিলের বিপরীতে সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকা ঘুষ আদায় করা হয়। ফলে, সপ্তাহে দুদিন করে মাসে সরকারী ছুটির দিন বাদে ৮ দিনে প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা ঘুষ আদায় করা হয় বলে ঘনিষ্ঠ একাধিক সুত্র জানিয়েছে। তিনি আরো জানান, সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের বড় বাবু খ্যাত প্রধান করণিক আল আমিন ও স্থায়ী মোহরার মনিরুল ইসলাম এসকল ফিস আদায় করে থাকেন। কমিশন দলিলের ক্ষেত্রে সরকারী নিয়মে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ৪৬০ টাকা নেবার বিধান থাকলেও সাড়ে ৪ হাজার ৬ হাজার টাকা নেয়া হয়। হেবা দলিলের ক্ষেত্রে প্রতিটিতে ৩৫০ টাকা নেবার বিধান থাকলেও ১-১০ শতাংশ হেবা ঘোষণা দলিলে ১৩‘শ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি শতকের জন্য ২০ টাকা করে অতিরিক্ত ফিস আদায় করা হচ্ছে। সুত্র গুলো আরো জানায়, খোশকবলা দলিলে নগদ/ হাতে হাতে ফিস নেবার বিধান না থাকলেও দলিল প্রতি ১৩‘শ টাকা আদায় করছেন অফিস সহকারী আল আমিন। দলিলের নকল উঠানোর ক্ষেত্রে প্রতিপাতা ৩০ টাকা নেবার বিধান থাকলেও নেয়া হচ্ছে ১৪‘শ টাকা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গ্রাহকদের মূল দলিল দেবার নিয়ম থাকলেও অফিসের কর্মচারীরা বিভিন্ন ভাবে গড়িমসি করে গ্রাহকদের নকল কপি উঠাতে বাধ্য করছে। এছাড়া অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে নাবালক ও জাল পড়চার মাধ্যমে জমি রেজিষ্ট্রি, দলিল সম্পাদনের ক্ষেত্রে সামান্য বানান ভুল/ ক্রুটি ধরা পড়লে বড়বাবু খ্যাত আল আল আমিন ৩/৪ হাজার টাকা আদায় করে আসছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।  এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাব- রেজিষ্টার সেলিম মল্লিক জানান, তিনি কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সাব-রেজিষ্টার হিসাবে কর্মরত। দৌলতপুরে কোন সাব-রেজিষ্টার না থাকায় তিনি সপ্তাহে দুদিন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র। অনিয়ম দুর্নীতি ও অতিরিক্ত ফিস আদায়ের বিষয়ে তিনি প্রথমে অস্বীকার করলেও বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে দলিল প্রতি নির্দিষ্ট হারে টাকা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন